স্কুল পরিচিতি
উত্তর জনপদের জেলা শহর দিনাজপুরের অতি নিকটে বিরল একটি জনবহুল উপজেলা। প্রায় তিনদিন থেকে ভারতের সীমানা
থাকায় এলাকাটিতে ততবেশী উন্নয়ন ঘটেনি। বিশেষ করে শিক্ষা-দীক্ষায় ছিল পশ্চাৎপদ। স্বাধীনত্তোর থানা সদরে ভাল শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান ছিলনা বললেই চলে। মানসম্মত ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব এতদাঞ্চলের দীর্ঘদিনের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন এ আদর্শ
উচ্চ বিদ্যালয়।
দিনাজপুর শহর থেকে পশ্চিমে কয়েক কিলোমিটার এগুলেই বিরল উপজেলা শহর। উপজেলা শহরের মধ্য স্থলে ছায়াঘেরা এক
মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টি অস্তিত। বিদ্যালয়টির পূর্বপার্শ্বে রয়েছে বিরল থানা ও উপজেলা চত্তর এবং উত্তর দিকে
বিরল-রাধিকাপুর রেল লাইন।
এরশাদ সরকারের আমলে থানাকে উপজেলায় উন্নীত করলে, বিরলে অনেক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী কর্মরত হন।
কিন্তু দিনাজপুর শহর অতি নিকটে হওয়ায় এবং বিরলে উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য
তাঁরা শহরেই অবস্থান করতে থাকেন। তাঁদেরকে বিরল সদরে বসবাসে উৎসাহিত করার জন্য, দ্বিতীয়তঃ এলাকায় একটি আধুনিক
উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, তৃতীয়তঃ বিরল কলেজের সহায়ক(ফিডার স্কুল)প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে উপজেলার উপজেলা
চেয়ারম্যান মরহুম মহসিন আলী, প্রথম নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোসলেম আলী মোল্লা, কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর
রহমান ও মোঃ আব্দুর রহিম মিয়া পরামর্শ করেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই,বিরলে একটি ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
ভাল স্কুল গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে রুপ লাভ করে পরবর্তী নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আনিস উদ্দীন মিয়ার আমলে। তাঁরই উদ্দ্যোগে
এবং অধ্যক্ষ মুহাম্মদ খলিলুর রহমানের প্রচেষ্টায় বিরল ডিগ্রী কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বিশেষ করে মোঃ আব্দুর রহিম
মিয়া,মোঃ শাহাজাহান মিয়া,মোঃ আমিনুল ইসলাম সাবেক অধ্যক্ষ ধুকুরঝাড়ি কলেজ,মোঃ আবুল কালাম আজাদ-
সাবেক উপাধ্যক্ষ,মোঃ আবুল খায়ের, স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মরহুম আব্দুস সালাম
ও বিরল জামে মসজিদের পেশ ইমাম মোঃ মনসুর আলী স্কুলটির শিক্ষকতার কাজে জড়িয়ে যান। অতঃপর তৎকালিন উপজেলা চেয়াম্যান মরহুম মহসীন আলীর সহযোগীতায়
1988 সালের পহেলা জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক ভাবে বিরল কলেজে প্রাথমিক পর্যায়ে শিশু শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশ শুরু
হয়। তৃতীয় শ্রেণী থেকে পর্যায়ক্রমে প্রতি বছরে একটি করে ক্লাশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়। কলেজের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কলেজ
গর্ভনিং বডি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় স্কুলটির নাম করণ করা হয় “কলেজিয়েট স্কুল“বিরল নামে। বিরলের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ
ও নাট্যব্যক্তিত্ব মোঃ শাহাজাহান শাহ্, আল হাজ মোহাম্মদ আলী, বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোঃ নজমুল ইসলাম সরকার এবং
উল্লেখ্যযোগ্য বিরলের সুধিজন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিরলে কর্মরত নির্বাহী কর্মকর্তাগণ স্কুলটির উন্নয়ন ব্যাপারে ব্যাপক
অবদান রাখেন ।সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম রিয়াজুল ইসলামও স্কুলটিকে মনে প্রাণে ভালবাসতেন। অল্পদিনের মধ্যেই স্কুলটি
বিরলের সকল স্তরের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।
কলেজের কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকায় অধ্যক্ষ স্কুলটির দায়িত্ব নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের মধ্যে মোঃ মহি উদ্দীনকে, প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে
সহকারী শিক্ষক হিসেবে মোছাঃ ফারজু আরা বেগম টয়েস, মোঃ আনিসুজ্জামান মিলন,মোঃ নজরুর ইসলাম ও একজন আয়া আঞ্জুয়ারা বেগম
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইতিমধ্যে স্কুলটিতে শিক্ষক ও ছাত্র সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাই কলেজ
চত্বরে অবস্থানরত স্কুলটিতে নানা সমস্যা দেখা দেয় । ঐ সময় নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে মর্তুজা স্কুলটি কলেজের অভ্যন্তরে
দক্ষিণে টিন সেটের ঘর স্থাপন করেন। পরবর্তী নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এম এ মান্নান নিজ উদ্যোগে 1993 সালে স্কুলটি
উপজেলা চত্বরে কুটির শিল্প সমাজ সেবা অফিসের একটি টিনের ঘরে দপ্তর স্থাপন করে মাঠের আমগাছ তলায় ক্লাশ চলতে
থাকে। প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ মহি উদ্দীন এ সময়েই প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
এম এ মান্নান এর ঐকান্ত প্রচেষ্টায় ও তৎকালীন ইউ ইউ পি চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান আক্কারুলের সহায়তায়
বিরলের অনেক ব্যক্তি স্কুলটিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। অনেকেই স্থায়ী ভবন নির্মানের জন্য জমি দান করেন ।
তাঁদের মধ্যে প্রাক্তন চেয়ারম্যান, মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরী, বাবু যুগোল চন্দ্র রায়, মোঃ জয়নাল আবেদীন, মোঃ জহুরুল
ইসলাম, মোঃ জহির উদ্দীন মন্ডল ও মরহুম মেহেদী উল ইসলাম, আরও অনেকে উল্লেখযোগ্য। জমি দান করার
সাথে সাথেই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করে“ বিরল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়“ নাম রাখা হয় । বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ের
ম্যানেজিং কমিটির সম্মানিত সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ বিদ্যালয়ের উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছেন ।
অনেক কষ্টের পর 1996 সালে বিদ্যালয়টি নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়। 1995 সালে বিদ্যালয়টি জুনিযর স্কুল
হিসেবে সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে। 1996 সালে 9ম শ্রেণি খোলার অনুমতি লাভ করে। 1998 সালে বিদ্যালয়টি
এম পি ও ভূক্ত হয়। ঐ সালেই বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা অন্য স্কুল থেকে এস এস সি পরীক্ষায় প্রথম অংশগ্রহণ করে
এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল লাভ করে । 2000 সালে সরাসরি বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে শুরু
করে। শুরুর প্রথম থেকেই বিদ্যালয়টির পরীক্ষার ফলাফল খুবই ভাল। পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি
লাভ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি আকর্ষণীয় দিক। এস এস সি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনের জন্য বিদ্যালয়টি
জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেছে । বিদ্যালয়ের সুনাম সুখ্যাতি উপজেলার সীমানা পেরিয়ে বহুদুর পর্যন্ত
ছরিয়ে পড়েছে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চরের ছেলে-মেয়েরাও এখানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভর্তি হচ্ছে। শুধু লেখাপড়ার ক্ষেত্রে
নয়, অন্যান্য সহ শিক্ষামূলক কার্যক্রমেও বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রিরা কৃতিত্বের পরিচয় করিয়ে দেয়। বির্তক প্রতিযোগিতা,
উপস্থিত বক্তৃতা, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ, মেধা অন্বেষন, পরপর দুই বার জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উৎযাপনে
উপজেলা ও জেলা পর্যাযে শ্রেষ্ঠ ও গানের প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার
করে আসছে। প্রতি বছর বিশেষ দিবসগুলোতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিশেষ করে রচনালেখা, প্যারেড, পিটি, ডিসপ্লেতে
অংশগ্রহণ করে শীর্ষস্থান অধিকার করে ধীরে ধীরে বিদ্যালয়ের সুনাম বিভাগীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে ।
বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে তিনটি ভবনে পাঠদান কর্মরত চলছে। বিভিন্ন সময় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এবং কখনও
কখনও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। বিগত সরকারের
আমলে উত্তরের ভবন নির্মাণে জেলা পরিষদ প্রচুর অর্থ সহায়তা করে। পশ্চিমের ভবন নির্মাণে ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিরল অর্থ
ব্যয় করে। বর্তমান সরকারের আমলে অত্র অঞ্চলের মাননীয় সংসদ সদস্য, জনাব মোঃ খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর
সহযোগিতায় পূর্ব দিকে তিনতলা একাডেমী ভবনের ভিত্তি প্রস্থর উদ্বোধন করেন এবং এ বছরে
তিন তলার কাজ প্রায় সমাপ্ত পর্যায়ে ।
প্রতিষ্ঠানটির আয়ের বড় উৎস ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন ও সরকারী অনুদান। বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক রয়েছেন
13 জন ও কর্মচারী 04 জন। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা 450 জন। বিদ্যালয়টির সুনাম ও কৃতিত্বের দাবিদার বিদ্যালয়ের
শিক্ষক মন্ডলী ও ছাত্র-ছাত্রী । বেশীরভাগ অভিভাবক সচেতন। প্রধান শিক্ষকের কড়া শাসন, শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টা
ও গভীর আন্তরিকতা, প্রতিষ্ঠানের সুশৃংখল নিয়মকানুন সর্বপরি ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল ফলাফল করতে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা
প্রতিষ্ঠানটিকে আজ বিরলে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছে। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক মন্ডলীর এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে
“বিরল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়“ দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত লাভ
করতে সক্ষম হবে ।